অ্যালোভেরা জেল মুখে মাখলে কি হয় আসুন জেনে নিইঃ

ভূমিকাঃ

অ্যালোভেরা বহু বছর থেকে তার প্রাকৃতিক গুনাবলী গুলোর জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করে এসেছে। এর প্রাকৃতিক গুলাবলী গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটির মধ্যে একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য উপকারিতা আরেকটি হচ্ছে ত্বকের যত্ন। এটি এখনকার সৌন্দর্য উপাদান গুলোর চেয়ে ভালো এবং স্বাস্থ্য উপকারি।
রোদে পোড়া থেকে শুরু করে আমাদের ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতি পর্যন্ত, অ্যালোভেরা সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রেখেছে। এই পোস্টটিতে আমরা এর ময়েশ্চরাইজিং এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বিশিষ্টগুলো সম্পর্কে অবগত হবো।

এটি কিভাবে ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে ও অভ্যন্তরীণ ভাবে খাওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য যেভাবে উপকারে আসে। আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক সমাধান চাইলে অ্যালোভেরা হতে পারে একটি সুন্দর সমাধান।

অ্যালোভেরার ইতিহাস ও উৎসঃ

অ্যালোভেরা উদ্ভিদটি ''অমরত্বের উদ্ভিদ'' নামেও পরিচিত। অনেক বছর আগের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এর। জানা গেছে এর উৎপত্তি আরবের কোনো এক উপদ্বীপে। অ্যালোভেরার ঔষধি বিশিষ্ট গুলোর জন্য এর প্রাচীন সভ্যতা গুলো অত্যন্ত মূল্যবান বলে ধরা হয়। প্রাচীন মিশরীয়রা এর নিরাময় সুবিধার জন্য অ্যালোভেরাকে ব্যবহার করতো।

ধরা হয়, তারা অ্যালোভেরা ব্যবহার করে ক্ষত, পোড়া এমনকি অভ্যান্তরীন রোগেরও চিকিৎসা করতেন। অ্যালোভেরাকে অমরত্বের উদ্ভিদ বলে গন্য করার কারণ এরা মৃত ব্যক্তির দেহকে সংরক্ষনের জন্য শ্বেতসার চর্চায় ব্যবহার করতো। ইতিহাস জুড়ে অ্যালোভেরা তার বহুমুখি ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতি দ্বারা সম্মানিত হয়েছে।

গ্রিক এবং রোমানিয়ারাও অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক বিশিষ্ট গুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বিভিন্ন ক্ষতের চিকিৎসার জন্য, ত্বকের জ্বালা প্রশমন করার জন্য এবং হজমের সমস্যার জন্য যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। শোনা যায়, অ্যালেকজান্ডার দ্যা গ্রেট শুধু মাত্র তার সৈন্যদের ক্ষত চিকিৎসা করার জন্য অ্যালোভেরার গাছপালা সংরক্ষিত একটি দীপ জয় করেছিলেন।

ঐতিহ্যবাহী চীনা ঔষধে, অ্যালোভেরা ত্বকের চিকিৎসা, পাচক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে। এটি বিশ্বাস করা হয়েছিলো যে অ্যালোভেরা শরীর কে অভ্যন্তরীন শক্তি, বা QE ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সামগ্রিক সুস্থতার প্রচার করতে পারে।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে, ঘৃতকুমারী ২০ শতকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ১৯৩০-এর দশকে, গবেষকরা অ্যালোভেরার রাসায়নিক গঠন অধ্যয়ন শুরু করেন। এর ফলে ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো সক্রিয় যৌগগুলির আবিষ্কার হয়। এই গবেষণাটি অ্যালোভেরার অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ এর খ্যাতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

আজ, ঘৃতকুমারী তার ঔষধি, প্রসাধনী এবং রন্ধনসম্পর্কীয় ব্যবহারের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এর প্রশান্তিদায়ক এবং ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে। এটি সাধারণত এখন ত্বকের যত্নের পণ্য যেমন লোশন, ক্রিম এবং বিভিন্ন জেলে ব্যবহৃত হচ্ছে। এবং এর প্রদাহ ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলীর কারণে রোদে পোড়া, ব্রণ, একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

এর সাময়িক প্রয়োগ গুলো ছাড়াও, অ্যালোভেরা প্রায়শই একটি পরিপূরক হিসেবে খাওয়া হয়। এবং এর অভ্যন্তরীণ অংশ গুলো স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য খাদ্য এবং পানীয় গুলোতে যোগ করা হয়। অ্যালোভেরার রস তার ডিটক্সিফাইং এবং হজমের বিশিষ্ট গুলোর জন্য পরিচিত, যা শরিরেকে পরিষ্কার করতে এবং সামগ্রিক অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে সহায়তা করে। সামগ্রিক ভাবে বলা যায় যে, অ্যালোভেরা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারি একটি উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত।

অ্যালোভেরা জেল মুখে মাখলে কি হয়ঃ

ঘৃতকুমারী এমন একটি উদ্ভিদ যা তার নিরাময় বৈশিষ্ট্য গুলোর জন্য যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। অ্যালোভেরার বাংলায় নাম হলো ঘৃতকুমারী। বিশেষ করে ত্বকের যত্ন নেয়ার সময় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অসাধারণ উদ্ভিদের ভেতরে জেল জাতীয় একটি পদার্থ রয়েছে যা পুষ্টি এবং এন্টি এক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।

এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য শক্তিশালী একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। ত্বকের জন্য এলোভেরার জেলের মূল দুটি সুবিধা রয়েছে তা হচ্ছে ত্বকের জ্বালা এবং প্রদাহ প্রশমন করার ক্ষমতা। আমার আপনার ত্বকের রোদে পোড়া একজিমা ব্রণ বা সাধারণ লাল ভাব এবং ফোলা যাই হোক না কেন, এলোভেরা জেল খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তোকে শান্ত করতে এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

অ্যালোভেরা কে কিছু TLC প্রয়োজন এমন ত্বকের চিকিৎসার জন্য একটি গো টু উপাদান বলেও সম্বোধন করা যায়। এর প্রশান্তিদায়ক বৈশিষ্ট্য ছাড়াও রয়েছে ক্ষত নিরাময়কে উন্নত করার ক্ষমতা। এতে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যা কোলাজেনের উৎপাদন বাড়াতে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে সাহায্য করে। যার ফলে কাঁটা,পোড়া এবং ক্ষত দ্রুত নিরাময় হয়।

এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য গুলো সংক্রমন প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এলোভেরা ত্বকের জন্য একটি দুর্দান্ত ময়েশ্চরাইজার। এর জেলটি হালকা ওজনের এবং স্যাতসেতে প্রকৃতির। এটি তৈলাক্ত বা সংবেদনশীল ত্বক সহ সমস্ত ত্বকের জন্য একটি আদর্শ উপাদান হতে পারে। নিয়মিত এলোভেরা ব্যবহার করে আপনার ত্বক কে হাইড্রেট এবং কোমল রাখতে পারেন সহজেই।

এর মাধ্যমে সূক্ষ্ম রেখা ও ক্ষতের উপস্থিতি হ্রাস করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল বর্ণ কে প্রচার করতে পারেন। তদুপরি, এলোভেরা একটি প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েন্ট যা ত্বকের মৃত কোষগুলিকে অপসারণ করতে এবং ছিদ্র গুলিকে বন্ধ করতে সাহায্য করে। এটি ব্রোন ব্রেক আউট এবং অন্যান্য তর্কের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে।

পাশাপাশি ত্বকের সামগ্রিক গঠন ও টোনও উন্নত করে। অ্যালোভেরার সাথে নিয়মিত এক্সফলিয়েশন আপনার ত্বককে মসৃণ এবং আরো উজ্জ্বল দেখাতে পারে, সেইসাথে বার্ধক্যের লক্ষণ গুলি কমাতে সহায়তা করে। আপনি যদি ত্বকের রোদে পোড়া বা ত্বকের অন্যান্য ক্ষতির শিকার হন তবে এলোভেরা ত্বককে মেরামত এবং পুনর্জীবিত করতেও সাহায্য করে থাকে।

এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন এবং খনিজ যা, ত্বককে পুষ্ট করে। সবশেষে বলা যায়, এলোভেরা ত্বকের প্রশান্তি এবং নিরাময় বৈশিষ্ট্য গুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের জীবনে।

চুলের যত্নতে অ্যালোভেরার উপকারিতাঃ

অ্যালোভেরা যে শুধু আপনার ত্বকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ তা কিন্তু নয়। এটি আমাদের চুলের জন্য অনেক ভালো একটি উপাদান হতে পারে। এই উপাদানটি যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে চুলের জন্যও। আপনার চুল কুঁকড়ে যাওয়া, শুষ্কতা এমন যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য প্রাকৃতিক একটি সমাধান হচ্ছে অ্যালোভেরা।

এটি আপনার চুলকে পুষ্ট করতে এবং আপনার চুলের জীবন ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। চুলের জন্য এলোভেরার ব্যবহারের সবচেয়ে সাধারণ সুবিধা গুলোর মধ্যে একটি হলো হাইড্রেট করার ক্ষমতা। এলোভেরা ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা চুলের ফলিকল গুলিকে পুষ্ট এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধিকে প্রচার করে।

এই অ্যালোভেরাতে আরেকটু উপাদান রয়েছে যা হলো এনজাইম। এটি ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত এবং ভাঙ্গা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করে আপনি আপনার চুলকে নরম, মসৃণ এবং জটমুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারেন। আপনি যদি খুশকি বা শুষ্ক চুলকানি মাথার ত্বকের সাথে লড়াই করতে চান তবে অ্যালোভেরা এই অবস্থা গুলি উপশম করতেও সাহায্য করবে আপনাকে।

মাথার ত্বকের চিকিৎসা হিসেবেও অ্যালোভেরা কে ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরা তার পরিষ্কার করার বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য পরিচিত, এটি বাণিজ্যিক শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার গুলির একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক বিকল্প হিসেবে কাজ করে। অ্যালোভেরায় পাওয়া জেলের মত পদার্থ চুল এবং মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল-ময়লা এবং জমাট দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

এটি আপনার চুলকে পরিষ্কার এবং সতেজ ও বোধ করায়। মৃদু ক্লিনজার হিসেবে ও অ্যালোভেরা কে ব্যবহার করা যায়। আপনার মাথায় আটকে থাকা ছিদ্র এবং মাথার ত্বকের ব্রণের মত সমস্যাগুলোও প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করতে পারেন এটিকে। এর ক্লিনজিং বৈশিষ্ট্য ছাড়াও রয়েছে চুলের বৃদ্ধিকে উন্নতি করতে পারে এবং চুল পড়া রোধ।

চুলের চিকিৎসা হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করে, আপনি আপনার চুলকে শিকর থেকে শক্তিশালী করতে এবং ঘন ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারেন। সর্বোপরি বলা যায়, আমাদের চুলের যত্নের জন্য এলোভেরা কে আমরা অনেক ভালো একটি প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url